mf10v3wbn1w71

Phantom Traffic Jam :: ঢাকা শহরের যানজটের মূল কারণ বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তির নিরিখে সমাধানকল্প

ঢাকা শহরে ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ হলেও তা নিরসনে দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এই অব্যবস্থাপনা কে ট্রাফিক জ্যাম নাম দিয়ে সংগায়িত করলেই আদতে এটি জ্যাম নিয়ে বরং বিশৃঙ্খলা। উন্নত বিশ্বেও ট্রাফিক জ্যাম হয় যেখানে প্রতিটি যানবাহন সুশৃঙ্খলভাবে লেন মেনে রাস্তায় অপেক্ষা করে।  আমাদের ট্রাফিক জ্যাম আসলে জ্যাম নয়, পুরোটাই বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতায়  পরিপূর্ণ।  

এই কথিত জ্যাম নিরসনে প্রাতিষ্ঠানিক বিকেন্দ্রীকরণ, জোড় বিজোড় নাম্বার প্লেটের গাড়ি নামানো, স্কুল কলেজ অফিস আদালতের সময়সূচি পরিবর্তন, সড়কের মান উন্নয়ন এসব নানা সমাধান প্রস্তাবনায় এলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন অনেক দীর্ঘমেয়াদি।  শহরের মানুষজন খুব দ্রুত এই সমস্যা থেকে হাফ ছেড়ে বাঁচতে চায়।  তাই দীর্ঘমেয়াদে এসব প্রস্তাবনা নিয়ে সুদূরপ্রসারী চিন্তা মাথায় রেখেও স্বল্প মেয়াদে এখন এমন কিছু করা দরকার জেনো মানুষ একটু স্বস্তিতে রাস্তায় নামতে পারে। যানজট নামক এই ক্যান্সার থেকে আরোগ্য পেতে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদি কেমোথেরাপির ব্যবস্থাও করতে হবে।  সঠিক যুগপোযোগী পলিসি ও প্রযুক্তির মাধ্যমে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে ২ কোটির বেশি মানুষের আবাসস্থল ঢাকায় বছরে যানজটে কর্মঘণ্টার হিসেবে ৪০-৫০ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয় যা দিয়ে প্রতিবছর একটা করে পদ্মা সেতু ও মেট্রো রেল বানানো সম্ভব এমনকি যা দেশের জাতীয় বাজেটের ৫ শতাংশ। তাই এই বিপুল পরিমান অর্থের অপচয় রোধে  ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজানোর দৃশ্যমান পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এখনই। 

যান্ত্রিক অযান্ত্রিক সবধরণের যানবাহন এক লেনে চলার ফলে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা

নতুন বাংলাদেশে ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা যেভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেছে তা কমিউনিটি ভলান্টিয়ারিং এর অনন্য উদাহরণ।  একইসাথে ২০২৪ সালে এসে ও যে মানুষকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্রণ করতে হচ্ছে তা নগ্ন ভাবে দেখিয়ে দেয় পূর্বের সরকারের নামকাওয়াস্তে ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্র।  পৃথিবীর যে অল্প সংখ্যক সভ্যতা বিবর্জিত দেশে রাস্তায় ম্যানুয়ালি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে হয় তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এবং সম্ভবত পৃথিবীতে একমাত্র দেশ যেখানে ২০২৪ সালে এসেও রাস্তায় ট্রাফিক বাতি নেই।  অথচ ১২-১৫ বছর আগেও ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিক বাতি জ্বলতো। বিগত ১৫ বছরের অপরিসীম দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারের সাক্ষী হয়ে এখনও রাস্তায় ট্রাফিক বাতি গুলো রয়ে গেছে অকার্যকর হয়ে। ঢাকার ট্রাফিক হয়েছে আরো বিশৃঙ্খল।

ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম কে ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভাষায় বলে “ফ্যান্টম ট্রাফিক জ্যাম” । ফ্যান্টম ট্রাফিক জ্যাম হলো এমন একটি ধরণের যানজট, যার কোনও সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই যখন গাড়ির চলাচলে ছোটখাটো ব্যাঘাত ঘটে। যেমন একজন চালক হালকা ব্রেক করে বা লেন পরিবর্তন করে, এই সামান্য গতির তারতম্যের কারণে পেছনের গাড়িগুলো ধীরে ধীরে আরো বেশি ব্রেক করে, ফলে এই  রিপল ইফেক্টে ধীর গতির প্রবাহ তৈরি হয়, যা শেষ পর্যন্ত পুরো রাস্তা থমকে যেতে পারে। একে ফ্যান্টম ট্রাফিক জ্যাম বলা হয় কারণ এর দৃশ্যমান কোনও কারণ থাকে না, অথচ যানজট তৈরি হয়।

কিভাবে রাস্তার ছোট উপাদান ট্রাফিক জ্যামের কারণ হতে পারে:

রাস্তার ছোটখাটো উপাদানও ট্রাফিক জ্যামের সৃষ্টি করতে পারে সেখানে ঢাকা শহরে মুহূর্তে মুহূর্তে এসব উপাদান লক্ষণীয় যেমন:

বাসের বেপরোয়া চলাচল ফ্যান্টম জ্যামের প্রধান স্রষ্টা:

  1. অনিয়ন্ত্রিত থামা: ঢাকায় বাসগুলো প্রায়ই নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া হঠাৎ করে রাস্তায় থেমে যাত্রী ওঠানামা করায়। যখন একটি বাস রাস্তার মাঝখানে দাঁড়ায় বা বিশালায়তন দেহ নিয়ে ক্রমাগত লেন পরিবর্তন করতে থাকে তখন পেছনের গাড়িগুলোও থামতে বাধ্য হয়। এই ধরনের থামা পুরো সড়কে রিপল ইফেক্ট তৈরী করে। প্রতিটি গাড়ি কিছুটা সময়ের জন্য থামে এবং ধীরে ধীরে সেই সড়কে যানবাহনের গতি কমতে থাকে। এক পর্যায়ে এটি যানজটে পরিণত হয়, যাকে ফ্যান্টম জ্যাম বলা হয়।
  2. সংকীর্ণ রাস্তায় বেপরোয়া চালানো: ঢাকার অনেক রাস্তাই সরু, যেখানে বড় বাসগুলো খুবই বেপরোয়া গতিতে চলে। বাসগুলো যখন হঠাৎ লেন পরিবর্তন করে বা সামনে ঢুকে পড়ে, তখন পেছনের গাড়িগুলো দ্রুত ব্রেক করতে বাধ্য হয়। এই হঠাৎ থামা বা গতি কমানো পুরো ট্রাফিক সিস্টেমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, যা আস্তে আস্তে ফ্যান্টম জ্যামের জন্ম দেয়।
ঢাকা শহরে বাসের খামখেয়ালি চলাফেরা

ঢাকা শহরে বাসের খামখেয়ালি চলাফেরা

অযান্ত্রিক যানবাহনের নৈরাজ্য ফ্যান্টম জ্যামের অন্যতম কারণ:

  1. রিকশা এবং মোটরবাইক: ঢাকার রাস্তায় রিকশা এবং মোটরবাইকগুলোর অনিয়মিত এবং আকস্মিক লেন পরিবর্তন ফ্যান্টম জ্যাম তৈরির একটি বড় কারণ। যখন একটি রিকশা বা মোটরবাইক হঠাৎ করে দিক পরিবর্তন করে বা গাড়ির সামনে চলে আসে, তখন পেছনের গাড়িগুলো হঠাৎ করে থামতে বাধ্য হয়। এটি একটি ধীরগতি এবং পরে জ্যাম তৈরি করে, কারণ এই হঠাৎ থামার প্রভাব পেছনের গাড়িগুলোর ওপর ক্রমাগত পড়তে থাকে।
  2. অন্যন্য অযান্ত্রিক যানবাহনের অপ্রত্যাশিত গতিবিধি: সিএনজি, রিকশা বা ঠেলাগাড়ির মতো যানবাহনগুলোর অনিয়ন্ত্রিত গতি, উল্টোদিকে অবাধে চলা এবং রাস্তার বিভিন্ন অংশ দখল করে চলাচল করা প্রধান সড়কের গতি কমিয়ে দেয়, যার ফলে সামান্য কারণে সৃষ্ট এই বিঘ্ন ফ্যান্টম জ্যামের আকার ধারণ করে।

ধীরগতির অযান্ত্রিক রিক্সার দাপটে অসহায় দ্রুতগতির যান্ত্রিক বাহন

রাস্তার খানাখন্দ কিভাবে ফ্যান্টম জ্যাম সৃষ্টি করে:

  1. গতি কমানো: রাস্তায় খানাখন্দ থাকলে চালকরা তাদের গাড়ির গতি স্বাভাবিকভাবে কমিয়ে ফেলে, কারণ তারা গাড়ির ক্ষতি এড়াতে চায়। যখন একটি গাড়ি গর্ত এড়াতে ধীরগতিতে চলে, পেছনের গাড়িগুলোও বাধ্য হয়ে গতি কমায়। এতে সড়কের একটি অংশে যান চলাচল ধীর হয়ে যায় এবং এই ধীরগতি পেছনের গাড়ির ওপর ঢেউয়ের মতো প্রভাব ফেলে, যা আস্তে আস্তে একটি বড় যানজটে পরিণত হয়।
  2. লেন পরিবর্তন: অনেক ক্ষেত্রে চালকরা খানাখন্দ এড়ানোর জন্য লেন পরিবর্তন করে, যা অন্যান্য যানবাহনের জন্য অসুবিধা তৈরি করে। লেন পরিবর্তনের এই আকস্মিকতা পেছনের যানবাহনগুলোকে হঠাৎ থামতে বাধ্য করে, ফলে একটি ছোট এলাকার গতি পুরো রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে এবং একটি ফ্যান্টম জ্যাম তৈরি হয়।

যত্র তত্র পথচারী পারাপার ফ্যান্টম জ্যাম তৈরি করে:

  1. হঠাৎ থামা: ঢাকার রাস্তায় পথচারীরা প্রায়ই নির্ধারিত জেব্রা ক্রসিং ছাড়া যত্রতত্র রাস্তা পার হয়। যখন কোনো পথচারী হঠাৎ করে রাস্তা পারাপার করে, তখন চালকরা বাধ্য হয়ে গাড়ির গতি কমায় বা থামে। এই থামার প্রভাব পেছনের গাড়ির ওপরও পড়ে এবং এটি ঢেউয়ের মতো ছড়িয়ে পড়তে থাকে, যা শেষমেষ যানজটে পরিণত হয়।
  2. অনিয়মিত পারাপার: ঢাকায় ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাসের অভাবে পথচারীরা যত্রতত্র রাস্তা পার হয়, যার ফলে যানবাহনের গতি বারবার কমানো বা থামানো লাগে। এই অনিয়মিত গতি পরিবর্তন সড়কে ফ্যান্টম জ্যামের অন্যতম কারণ।

পথচারীদের খামখেয়ালি রাস্তা পার হওয়া থেকে ফ্যান্টম জ্যাম সৃষ্টি হয়

যত্রতত্র পার্কিং ফ্যান্টম জ্যাম তৈরি করে:

  1. রাস্তার প্রস্থ কমানো: যখন রাস্তার পাশে বাস, ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন পার্কিং করা হয়, সেটি মূল সড়কের ব্যবহারের অংশ কমিয়ে ফেলে। রাস্তাটি সংকীর্ণ হয়ে গেলে গাড়িগুলোকে আরো সাবধানে এবং ধীরে চলতে হয়। মহাখালী বাস টার্মিনাল বা তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডের মতো এলাকায়, যখন বাস বা ট্রাক রাস্তার দুই পাশে পার্কিং করে রাখা হয়, তখন মূল রাস্তা কার্যত অর্ধেক হয়ে যায়। ফলে গাড়িগুলোর চলাচলের জন্য লেন সংকুচিত হয়ে যায়, এবং যানবাহনগুলো সঠিক গতিতে চলতে পারে না। এই ধরনের পরিস্থিতি ফ্যান্টম ট্রাফিক জ্যামের অন্যতম কারণ।
  2. রাস্তার মাঝে হঠাৎ থামা: অনেক সময় পার্ক করা যানবাহনগুলোর কারণে রাস্তা এতটা সংকীর্ণ হয়ে যায় যে চালকরা হঠাৎ করে থেমে যেতে বাধ্য হয়। এই হঠাৎ থামার প্রভাবও পিছনের গাড়িগুলোর ওপর পড়ে, যা আস্তে আস্তে পুরো রাস্তায় যানজট সৃষ্টি করে।

বাসের যত্রতত্র থামা, রিকশার অনিয়মিত চলাচল, এবং ঢাকার অন্যান্য যানবাহনের নৈরাজ্য সড়কে এমন এক ধরনের জটিলতা তৈরি করে, যেখানে সামান্য একটি কারণ থেকেই পুরো সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। এই জ্যাম কোনো দৃশ্যমান কারণ ছাড়াই গতি কমিয়ে দেয় এবং সড়কজুড়ে যানজট ছড়িয়ে পড়ে, যা আসলে ফ্যান্টম ট্রাফিক জ্যাম হিসেবে পরিচিত।

ঢাকার ট্রাফিকের হ য ব র ল অবস্থা

অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও সুনির্দিষ্ট পলিসি  দিয়ে এই যানজট দুর্যোগ থেকে কিভাবে আমরা রক্ষা পেতে পারি তা নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা : 

১. লেন ব্যবস্থাপনা: লেন মার্কিং
প্রতিটি সড়কে লেন মার্কিংয়ের মাধ্যমে যানবাহনগুলোর চলাচল সুসংগঠিত করতে হবে। লেন নির্ধারণ করে দিলে দ্রুতগতির ও ধীরগতির যানবাহন আলাদা হয়ে যাবে, যা যানজট কমাতে সাহায্য করবে। নির্দিষ্ট লেনে অন্য গাড়ি চললে সনাক্ত করে মামলার বিধান দিতে হবে। 

২. অযান্ত্রিক যানবাহনের আলাদা লেন এবং ক্রমান্বয়ে অপসারণ
রিকশা, ভ্যানসহ অন্যান্য অযান্ত্রিক যানবাহনের জন্য আলাদা লেন তৈরি করা উচিত। ক্রমান্বয়ে এসব যানবাহনের সংখ্যা কমিয়ে এনে শহরের কেন্দ্রীয় সড়কগুলো থেকে সরাতে হবে। অযান্ত্রিক, ধীরগতির বিশৃঙ্খল এই বাহন পরিকল্পিত নগরায়নের অন্যতম প্রধান অন্তরায়। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক, নিরাপদ, ও পরিবেশবান্ধব বাহন চালুর মাধ্যমে রিকশার মতো পুরনো ধীরগতির বাহনের জাদুঘরে জায়গা নেয়া উচিত।

৩. রিকশা ও ভ্যানের লাইসেন্স প্লেট
ঢাকায় চলাচলকারী প্রায় ১৫ - ২ ০ লাখ রিকশার নিয়ন্ত্রণের জন্য সুনির্দিষ্ট লাইসেন্স প্লেট চালু করা উচিত। এতে রিকশার বৈধতা যাচাই করা সহজ হবে এবং অবৈধ রিকশা নিয়ন্ত্রণে আসবে। বাংলাদেশে পরিবহন সেক্টরে অনেক আইন থাকলেও রিক্সা নিয়ন্ত্রণে আজ পর্যন্ত কোনো আইন প্রকাশিত হয়নি। রিক্সা চালকদের শিক্ষার অভাব, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা, যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব তাদেরকে রাস্তায় বিশৃঙ্খলা তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করছে, যাদের বেশিরভাগই সড়কে চলাচল করতে যে আইন বলতে কিছু আছে তা ই জানে না।  

৪. ট্রাফিক বাতি কার্যকর এবং এডাপ্টিভ ট্রাফিক সিগনালিং
সড়কে সঠিকভাবে ট্রাফিক বাতিগুলো কার্যকর করা জরুরি। এডাপ্টিভ ট্রাফিক সিগনালিং প্রযুক্তির মাধ্যমে যানবাহনের চাপ অনুযায়ী সিগনালের সময় নির্ধারণ করা যাবে, যা যানজট কমাবে।

৫. ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেম দিয়ে আইন ভঙ্গকারীদের শনাক্তকরণ
স্মার্ট সিসিটিভি ও ট্রাফিক ক্যামেরা ব্যবহার করে আইন ভঙ্গকারীদের সনাক্ত করে তাৎক্ষণিক জরিমানা আরোপ করা উচিত। এতে আইন মানার প্রবণতা বাড়বে।

৬. বাস আধুনিকীকরণ
বাসগুলোকে আধুনিক ও নির্দিষ্ট রুটে পরিচালিত করতে হবে। ঢাকার বাস রুটগুলোকে পুনর্বিন্যাস করে যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করা গেলে ব্যক্তিগত যানবাহনের প্রয়োজনীয়তাও কমে আসবে। 

৭. বাস স্টপেজ নির্ধারণ
বাসগুলোর জন্য নির্দিষ্ট স্টপেজ নির্ধারণ করে সেখানে যাত্রী ওঠা-নামা বাধ্যতামূলক করা উচিত। এতে যানজট কমবে এবং সড়কে বিশৃঙ্খলা কমবে। স্টপেজ ছাড়া যেন বাস কোনোভাবেই দাঁড়াতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। বাস চালকদের বেপরোয়া গতি ও বিশৃঙ্খল গতিবিধি রাস্তায় অন্য সব যানবাহন চালকদের বিরক্তির উদ্রেক করে তা বলাই বাহুল্য।  

৮. ফুটপাথ দখলমুক্ত করা
ফুটপাথগুলোকে হকারমুক্ত করে পথচারীদের হাঁটার জন্য উন্মুক্ত করা জরুরি। এর ফলে পথচারীরা নিরাপদে চলাচল করতে পারবে এবং সড়কে যানবাহনের চাপ কমবে।

৯. রাস্তার মোড়ে রিকশা স্ট্যান্ড ও হকারমুক্ত করা
প্রতিটি রাস্তার মোড়ে অবৈধ রিকশা স্ট্যান্ড ও হকারদের সরিয়ে দিয়ে সড়কের কার্যকরী প্রস্থ বৃদ্ধি করা জরুরি, যা যান চলাচলকে দ্রুততর করবে।

১০. ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধ করা
সড়কে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধ করার জন্য স্বচ্ছতা ও নজরদারি বাড়ানো উচিত। এটির মাধ্যমে আইনপ্রয়োগ প্রক্রিয়া নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ হবে। ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেমের মাধ্যমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হলে ধীরে ধীরে ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা কমানো যেতে পারে, যা সিস্টেমকে আরও কার্যকর করবে।

১২. অবৈধ পার্কিং বিলুপ্ত করা
যত্রতত্র অবৈধ পার্কিং বন্ধ করতে হবে। সুনির্দিষ্ট পার্কিং এলাকা নির্ধারণ করে সেখানে নিয়মিত মনিটরিং ও আইন প্রয়োগের মাধ্যমে রাস্তার কার্যকর দৈর্ঘ বজায় রাখা সম্ভব। 

১৩. জেব্রা ক্রসিং পুনর্বিন্যাস এবং আইন
পথচারীদের নিরাপদ পারাপারের জন্য জেব্রা ক্রসিংগুলো সঠিকভাবে স্থাপন করা জরুরি। জেব্রা ক্রসিং ছাড়া রাস্তা পারাপারের ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে চালককে দায়মুক্তি দেবার আইন করা উচিত, যাতে পথচারীরা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সড়ক পার হতে উৎসাহিত হয়। 

ঢাকার প্রায় দুই কোটি মানুষের জন্য ট্রাফিক পুলিশ সদস্য রয়েছেন মাত্র চার হাজার। রাজধানীর মাত্র ৩৩৯টি পয়েন্টে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। বিশৃঙ্খল যানবাহন চালকদেরকে যথাযথভাবে সনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য পর্যাপ্ত সংখক আইন প্রয়োগকারী লোকবল নিয়োগ করা রীতিমতো দুরূহ ব্যাপার। 

আইন প্রয়োগ নিশ্চিত হবে কিভাবে ?

সড়কের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে শুধু আইন করলে হবে না, আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। আইন অমান্য করে মানুষ যখন পার পেতে থাকে তখন আইন ভঙ্গ করাই অভ্যাস এ পরিণত হয়। আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে প্রয়োজন সাক্ষ্য প্রমান। একমাত্র আধুনিক প্রযুক্তিই এই সাক্ষ্য প্রমান উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ করতে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। 

প্রযুক্তি দিয়ে সমাধান ? কতটা বাস্তবসম্মত ??

ঢাকা শহরে প্রাইভেট কার, বাস/ট্রাক , মোটরসাইকেল/স্কুটার এই প্রধান ধরণের যানবাহনের জন্য আলাদা যেন করা কঠিন না।  কঠিন হলো যেন অমান্যকারী দের  গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা এবং তাদের শাস্তি/জরিমানার ব্যবস্থা করা। প্রশ্ন হলো ঢাকা শহরে এতগুলো রাস্তায় হাজার হাজার ট্রাফিক পুলিশ মোতায়ন করে কি ড্রাইভার দের লেন মানাতে বাধ্য করা রীতিমতো অসম্ভব । রাস্তায় লেন  মার্কিং করে দিলেও সেটা যে চালকেরা পরোয়া করবে না তা বলাই বাহুল্য।

তাহলে একটাই উপায় আছে সেটা হলো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া । প্রায় প্রতিটি রাস্তায় ই সার্ভিলেন্স ক্যামেরা বসানো আছে, প্রয়োজনে আরো বসানো হোক। সেই ক্যামেরা অত্যাধুনিক কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে প্রতিটি যানবাহনের ধরণ বুঝে লেন মাফিক গতি বিধি পর্যবেক্ষণ করে স্বয়ংকৃত ভাবে লাইসেন্স প্লেট ও ছবি/ভিডিও সহ ইভিডেন্স সংগ্রহ করে কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করতে পারে যা থেকে সেই যানবাহনের মালিক কে মামলা বা জরিমানা করে SMS/Email এর মাধ্যমে সতর্ক করে দেওয়া যায়। এই জরিমানার অর্থ সেই যানবাহনের মালিক যেন  পরবর্তী বছরের ফিটনেস বা ট্যাক্স টোকেন নবায়নের সময় পরিশোধ করতে বাধ্য হয়। এতে চালক রা যেমন আইন মানতে বাধ্য হবে তেমনি রাষ্ট্রের কোষাগারে রাজস্ব বাড়বে। সর্বোপরি এটি একটি পরীক্ষিত ব্যবস্থা যা বিশ্বের উন্নত ও সভ্য দেশগুলোতে কার্যকর। 

কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন সফটওয়ার দিয়ে গাড়ির তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ

কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন সফটওয়্যার ক্যামেরা থেকে সরাসরি ডাটা প্রসেসর ব্যবহার করে যে কোনো বাহনের গতি ও প্রকৃতি সংক্রান্ত তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশ্লেষণ করে আইন অমান্যকারীদের সনাক্ত করতে পারবে। প্রতি ৫০০ মিটার পর পর তো আর ট্রাফিক পুলিশ মোতায়ন করা সম্ভব নয়, তবে প্রতি ৫০০ মিটার পর পর ক্যামেরা বসানো সম্ভব। যে বিষয়গুলো ক্যামেরা থেকে সনাক্ত করা যায় : 

১. লেন অমান্যকারী যানবাহন

যখন কোনো যানবাহন নির্দিষ্ট লেন না মেনে অন্য লেনে প্রবেশ করে, AI সিস্টেম ক্যামেরার মাধ্যমে এটি সনাক্ত করতে পারে। ক্যামেরা লেনের মধ্যে রেখাগুলো সনাক্ত করে এবং গাড়ির চলাচলের লেন মেনে চলা না চলার তথ্য বিশ্লেষণ করে লেন অমান্যকারীদের সনাক্ত করতে পারে।

২. উল্টো পথে আসা যানবাহন

উল্টো পথে চলা যানবাহন ট্রাফিক ব্যবস্থার জন্য বিপজ্জনক। ক্যামেরা ও AI সফটওয়্যার ট্রাফিকের সঠিক দিক নির্ধারণ করে এবং কোনো যানবাহন উল্টো পথে আসছে কিনা তা চিহ্নিত করে। এতে উল্টো পথে আসা যানবাহনের স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবি তোলা এবং সনাক্তকরণ সম্ভব হয়।

৩. অতিরিক্ত গতিতে চলা যানবাহন

AI সিস্টেম ক্যামেরার মাধ্যমে কোনো যানবাহনের গতি পরিমাপ করতে পারে। প্রতিটি সড়কের নির্দিষ্ট গতিসীমা থাকে, যা অতিক্রম করলে সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে যানবাহনের গতি বিশ্লেষণ করে এবং অতিরিক্ত গতিতে চলা গাড়িগুলোকে সনাক্ত করতে পারে।

৪. ফিটনেসবিহীন যানবাহন

ক্যামেরা ও AI সিস্টেমের মাধ্যমে যানবাহনের নম্বর প্লেট স্ক্যান করে ডাটাবেস থেকে ফিটনেস সম্পর্কিত তথ্য তুলনা করা সম্ভব।

৫. অবৈধ পার্কিং

AI ক্যামেরা প্রযুক্তি অবৈধভাবে পার্কিং করা যানবাহনকে সনাক্ত করতে সক্ষম। সিস্টেম নির্দিষ্ট এলাকায় কোনো যানবাহন কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে তা পর্যবেক্ষণ করে এবং যেসব এলাকায় পার্কিং নিষিদ্ধ, সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলোকে সনাক্ত করে জরিমানা দেওয়ার জন্য তথ্য সংগ্রহ করে।

৬. যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী উঠানো বাস

ঢাকার বাসগুলো প্রায়ই রাস্তার মাঝখানে বা যেখানে থামা উচিত নয়, সেখানেই যাত্রী উঠানামা করে। AI ক্যামেরা এই ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং নির্ধারিত স্টপেজ ছাড়া যেখানে যেখানে বাস থামে, সেই স্থানগুলো চিহ্নিত করে আইন লঙ্ঘনের ঘটনা সনাক্ত করতে পারে।

৭. অবৈধ পথচারী পারাপার

AI ক্যামেরা পথচারীর চলাচল পর্যবেক্ষণ করে এবং যেসব পথচারী নির্ধারিত ফুটপাথ বা জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার না করে যত্রতত্র রাস্তা পারাপার করে, তাদের সনাক্ত করতে পারে। এর ফলে, পথচারীদের সড়ক নিরাপত্তা বিধান ও আইন মানার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।

৮. মূল সড়কে অযান্ত্রিক বা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার উপস্থিতি

প্রধান সড়কগুলোতে অযান্ত্রিক যানবাহন বা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চলাচল নিষিদ্ধ হলে, AI ক্যামেরা সহজেই এ ধরনের যানবাহন সনাক্ত করতে পারে। যানবাহনের ধরন বিশ্লেষণ করে সিস্টেম সঠিকভাবে অযান্ত্রিক যানবাহনগুলোর উপস্থিতি চিহ্নিত করে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।

৯ . এডাপ্টিভ ট্রাফিক সিগনালিং সিস্টেম বাস্তবায়নে

কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ও ক্যামেরার সন্নিবেশে প্রতিটি রাস্তায় কোন দিকে কোন লেনে কতগুলো কি ধরণের গাড়ি প্রতি দিনে এমনকি প্রতি ঘন্টায় বা মিনিটে চলাচল করছে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে গণনা করে রিয়েল টাইম ডাটা পাওয়া সম্ভব। এই তথ্য থেকে কোন ট্রাফিক সিগনালে কতক্ষন লাল বাতি কতক্ষন সবুজ বাতি জ্বালাতে হবে তা ইন্টেলিজেন্ট সফ্টওয়ার এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিক গণনা করে অপটিমাম সিগন্যাল টাইমিং নিশ্চিত করা সম্ভব। রিয়েল টাইম ট্রাফিক ফ্লো রেট থেকে এডাপ্টিভ সিগন্যাল টাইমিং বাস্তবায়ন করে উন্নত দেশগুলো ভালোই সুফল পাচ্ছে, সেখানে আমাদের সিগন্যাল বাতিগুলোই অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে। গাড়ির ভলিউম কাউন্ট করা থাকলে বিভিন্ন ট্রেন্ড বোঝা যায় যার প্রেখ্হিতে কোন রাস্তায় সড়কের আরো মানোন্নয়ন করতে হবে তার সুনির্দিষ্ট তথ্যভিত্তিক একটি চিত্র ফুটে উঠে যা ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং এও কার্যকর ভূমিকা রাখে।

ক্যামেরা ভিত্তিক #AI সিস্টেমের একটি বড় সুবিধা হলো এতে আইন ভঙ্গকারীর সুনির্দিষ্ট মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও এভিডেন্স পাওয়া যায় সার্বক্ষণিক। এমনকি নির্দিষ্ট কোনো গাড়ি কোন কোন পথ দিয়ে যাচ্ছে চাইলে ট্র্যাক করা যায় যা অপরাধকর্মে ব্যবহৃত গাড়ি সনাক্তে কার্যকর। 

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এর যুগে আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগই পারে ট্রাফিকের এ সকল সমস্যা সমাধান করতে, যা উন্নত বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ই করে দেখিয়েছে। তবে বাংলাদেশের ট্রাফিক প্যাটার্নের কারণে উন্নত বিশ্বের এসব অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এখানে সঠিকভাবে কাজ করে না যা ইতমধ্যেই অবলোকন করা গিয়েছে । এই তাগিদ থেকেই স্থানীয় মেধা ও প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটিয়ে বিশেষভাবে বাংলাদেশের ট্রাফিক কন্ডিশনে ব্যবহার উপযোগী ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ডেভেলপ করতে সচেষ্ট হতে হবে। অত্যাধুনিক #ITS প্রযুক্তি জাপান থেকে কোটি কোটি টাকা দিয়ে এনেও বাস্তবায়নই করতে পারলো না কর্তৃপক্ষ, সেখানে সুফল পাওয়া তো পরের ব্যাপার। এখন দেশি অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশের লোকাল কন্ডিশনের জন্য ITS প্রযুক্তি ডেভেলপ করছে, সেগুলোকে কাজে লাগানো হোক। দেশীয় গবেষকেরা দেশীয় পরিবেশ পরিস্থিতি ও মানুষের মনোভাব সম্পর্কে অনেক বেশি অভিজ্ঞ ও সচেতন। এছাড়া বিদেশী #ITS প্রযুক্তি সভ্য দেশের জন্য বানানো যা বাংলাদেশের এতো বিচিত্র রকম যানবাহন ও পথচারীদের খামখেলী চলাফেরা সম্পর্কে অবগত নয়।

রাস্তার বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে হাজার হাজার ট্রাফিক পুলিশ মোতায়ন করা সম্ভব না, সম্ভব হলেও এই পুলিশের পক্ষে সর্বক্ষক তদারকি করা রীতিমতো অসম্ভব, বিশেষত ব্যস্ত রাস্তায়, কারণ মানুষ কখনোই পূর্ণ মনোযোগে ঘন্টার পর ঘন্টা পূর্ণ কর্মক্ষম থাকেনা। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারই পারে এই সংকট থেকে উত্তোরণের উপায় বাতলে দিতে। 

অযান্ত্রিক যানবহন সুশৃঙ্খল নগরায়নের প্রধান অন্তরায়

ঢাকা যেন রিক্সার নগরী

ভিনদেশে স্বল্প দূরত্বে মানুষ সাধারণত হেঁটেই চলাচল করে। অন্যদিকে বাংলাদেশে মানুষের হাঁটার প্রবণতা হ্র্রাস পাওয়ার প্রচ্ছন্ন কারণগুলো এরকম:

১. ফুটপাথ: হকারদের দখল দৌরাত্ম ও বিশৃঙ্খলা (চাঁদাবাজির দৌরাত্ম, রাজনৈতিক সমস্যা )

২. গণপরিবহন: বিশৃঙ্খলা ও হয়রানি (রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম )

৩. ব্যক্তিগত গাড়ি: আকাশচুম্বী ট্যাক্সের বোঝা (পলিসিগত সমস্যা )

৪. CNG অটোরিকশা : মিটার দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি ( আইন প্রয়োগের অভাব )

৫. মোটরবাইক : এখানেও অস্বাভাবিক ট্যাক্স, সাথে ঝুঁকিপূর্ণ বলে ব্রিজে উঠতে দেয় না, এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে দেয় না, মহাসড়কে ঈদে বন্ধ আর পুলিশের হয়রানি তো আছেই

সাধারণ জনগণ যাবে কই, তাই রিক্সাই ভরসা। ধীরগতির হলে কি হবে চাইলেই উল্টো পথে গিয়ে সময় বাঁচানো যায়।  লাইসেন্স লাগে না, ট্যাক্স লাগে না, আইন মানার বাধ্য বাধকতা নাই, গাড়িচালকেরা ঘষা খাওয়ার ভয়ে সমীহ করে চলে আর গরিব বলে দুর্ঘটনা ঘটালেও মাফ পাওয়া যায় !  কি বিচিত্র !!

ব্যাটারিচালিত রিক্সা নিয়ে অনেক কথা হলেও ঢাকা শহরে চলাচলকারী প্রায় ১৩ - ১৫ লাখ অযান্ত্রিক রিকশা যার ৯৫-৯৭ শতাংশই অবৈধ তা নিয়ন্ত্রণে কোনো তৎপরতা চোখে পরে না। বাংলাদেশে পরিবহন সেক্টরে অনেক আইন থাকলেও রিক্সা নিয়ন্ত্রণে আজ পর্যন্ত কোনো আইন প্রকাশিত হয়নি!! এই অরাজকতা সৃষ্টিকারী ধীরগতির মান্ধাতার আমলের অযান্ত্রিক রিক্সা নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পরে না।

বিশ্বের কোনো দেশে প্রধান সড়কে রিক্সার মতো ধীরগতির যান চলতে দেওয়া হয় না।  সড়কের সব লেন দিয়েই রিক্সার অবাধ চলাচলে দ্রুতগতির যানবাহনগুলো হয়ে পরে ধীরগতির, তৈরী হয় যানজট ও  বিশৃঙ্খলা।  রিক্সা নিয়ন্ত্রণে কেন দেশে কোনো আইন থাকবে না ? কেন রিক্সা আইনের উর্ধে থেকে আরো বেপরোয়া হতে থাকবে ? সিটি কর্পোরেশন কি জেগে থেকেই ঘুমন্ত !! নাকি রিক্সা কে নিয়ন্ত্রণ না করা একশ্রেণীর  সুবিধা দেওয়ার পায়তারা?

কেন অলিগলি ছেড়ে প্রধান সড়কে দাপট দেখাচ্ছে রিকশা?

  • দুই সিটি কর্পোরেশনে রিক্সার নির্দিষ্ট হিসাব নেই। উত্তর সিটি কর্পোরেশনে কাগজে কলমে ৩০ হাজার আর দক্ষিণে ১ লক্ষ ৯০ হাজার রিক্সা রয়েছে
  • তবে বেসরক্যারি হিসাবে দুই সিটি কর্পোরেশন মিলে  ১২ লাখের বেশি রিক্সা রয়েছে । তবে অনুমোদিত রয়েছে মতো ৭৯ হাজার রিক্সা । বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ১৫ লাখ রিকশা ঢাকায় চলাচল করছে।
  • প্রধান অনেক সড়কে অনুমতি না থাকলেও রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের ছত্রছায়ায় দেদার চলছে বিভিন্ন সড়কে, এমনকি অনেক মূল সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা
  • ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ বা বিলসের এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, ঢাকা শহরে ১১ লাখ রিকশা চলাচল করছে। এই সংখ্যা গত ৫ বছরে অনেক বেড়েছে।
  • ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভেতরে বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ৮ লাখ রিকশা চলাচল করছে।
  • রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কে এসব রিকশা চলাচলে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের ছত্রছায়ায় দেদার চলছে বিভিন্ন সড়কে।
  • সিঙ্গাপুর, ভারত  এসব শহরেও একসময় রিক্সা চলতো, কিন্তু এখন সিঙ্গাপুরে রিক্সা বিলুপ্ত হয়ে গেছে, আর ভারতে আইন করে মূল সড়কে আসা বন্ধ করা গেছে।
শহরে বিশৃঙ্খল রিক্সা

প্রশাসন কেন চুপ ?

  • বাংলাদেশে পরিবহন সেক্টরে অনেক আইন থাকলেও রিক্সা নিয়ন্ত্রণে কোনো আইন প্রকাশিত হয়নি
  • গরিব ও অসহায় বলে রিক্সাচালকেরা বার বার আইন অমান্য করেও পার পেয়ে যায় এবং আরো বেপরোয়াভাবে হয়ে উঠে।
  • ২০১৯ সালে রিক্সা উঠিয়ে দেওয়ার জন্য দুই সিটি কর্পোরেশন চেষ্টা চালালেও রিকশাচালকদের আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী রিক্সার জন্য আলাদা যেন চালুর ঘোষণা দেন যা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি এবং কোথাও কোথাও হলেও রিক্সা চালকেরা সেসব যেন থোড়াই কেয়ার করে।
  • রিক্সা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অনেক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিলেও বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক কারণে সেগুলো বাস্তবায়ন করা যায় নি।

ঢাকার রাস্তায় রিকশা চলছে কার ইশারায়?

  • ঢাকার রিক্সার নিবন্ধন দেওয়ার কথা দুই সিটি কর্পোরেশনের হাতে থাকলেও নিবন্ধনের থোড়াই পরোয়া করে এলাকার প্রভাবশালীদের ইশারায় রিক্সা নিয়ে রাস্তায় নেমে যাচ্ছে।
  • ঢাকায় চলমান রিক্সার মাত্র  ৩-৪ শতাংশের বৈধতা রয়েছে। ২০২৩ সালে কৃষিক্ষেত্র থেকে প্রায় ১৬ লক্ষ শ্রমিক শহরে এসেছে রিক্সা চালানোকে পেশা হিসেবে নিতে। (খন্দকের আব্দুস সালাম, গবেষক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ )
  • প্রধান সড়কে রিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ করা হলেও প্রশাসনের নির্বিকার মনোভাব আর পুলিশ সহ  স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাঁদা দিয়ে প্রধান সড়কে বুক ফুলিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রিক্সা
  • রিকশার ওপর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কোনো নিয়ন্ত্রণ কখনোই ছিল না।
  • রাজনৈতিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা অবৈধ রিকশা রাস্তায় নামানোর জন্য প্রধানত দায়ী।

ব্যাটারি চালিত রিক্সার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে ?

  • রিকশা মালিকরা বলছেন, একটি সাধারণ রিকশা তৈরিতে খরচ হয় ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এরপর লাইসেন্স নিতে খরচ হয় প্রায় একই রকম। কিন্তু ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে তৈরি করা যায় একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা। তাতে নেই লাইসেন্স নেয়ার ঝামেলা। সহজে চালানো যায়। তাই অনেক সাধারণ মানুষও এসব রিকশা কিনে কারও হাতে ধরিয়ে দিয়ে পথে নামাচ্ছেন।
  • সাধারণ রিকশা মালিকরা বাড়তি আয়ের জন্য ঝুঁকছেন ব্যাটারিচালিত রিকশার প্রতি। ব্যাটারিচালিত রিকশার ক্ষেত্রে আয় প্রায় তিন গুণ।
  • এলাকাভিত্তিক প্রভাবশালী চাঁদাবাজরা নিয়ন্ত্রণ করে ব্যাটারিচালিত রিক্সা যা রাস্তায় চালাতে পুলিশকেও  চাঁদা দিতে হয়
  • যদিও এই ব্যাটারিচালিত রিক্সা বন্ধ নয় বরং ব্যবহার বাড়ানোর পক্ষে বিদ্যুৎ ও  জ্বালানি মন্ত্রণালয়। পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এগুলোকে “বাংলার টেসলা” বলে অভিহিত করেন সাবেক মন্ত্রী। অবশ্য এগুলোর ফিটনেস দেখার দায়িত্ব বিদ্যুৎ বিভাগের নয় বলে দায় এড়িয়ে যান।

রাস্তার মোড়ে মোড়ে রিক্সা স্ট্যান্ড !

  • ঢাকার প্রায় প্রতিটি সড়কের মোড়ে খেয়াল খুশিমতো রাস্তা দখল করে গড়ে উঠছে অস্থায়ী রিক্সা স্ট্যান্ড , যা রাস্তার ক্যাপাসিটি শুধু কমিয়েই দিচ্ছে না সাথে রাস্তার প্রবেশমূখ সরু করে যানজট আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে
  • ট্রাফিক পুলিশ বক্সের নাকের ডগায় কিভাবে তারা রিক্সা স্ট্যান্ড বানিয়ে ফেলছে তা সহজেই বোধগম্য

বেপরোয়া রিক্সাচালক

  • রিক্সা চালকদের শিক্ষার অভাব, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা, যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব তাদেরকে রাস্তায় বিশৃঙ্খলা তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করছে, যাদের বেশিরভাগই সড়কে চলাচল করতে যে আইন বলতে কিছু আছে তা ই জানে না।
  • একটু সময় বাঁচানোর জন্য সিগন্যাল অমান্য করে  রিক্সাচালকের উল্টো পথে রিক্সা ঢুকিয়ে যানজট তৈরিতে প্রধান ভূমিকা রাখে। কিন্তু এবিষয়ে তাদের মধ্যে কোনো সচেতনতা নেই বা সচেতন করার উদ্যোগও
  • অনেক রিক্সাচালক অবৈধভাবে রাস্তার একাধিক লেন দখল করে চালায়, এমনকি একে অন্যকে ওভারটেক করার প্রতিযোগিতায় মত্ত থাকে । এর ফলে রাস্তার কার্যকরী প্রস্থ কমে যায় এবং যানজট বৃদ্ধি পায়।
  • রিক্সা খুবই ধীরগতির যান। সড়কে রিক্সা আর দ্রুতগতির মোটর ভেহিকেল একই সাথে চললে রিক্সার গতির কারণে সেই দ্রুত গতির যান গতি কমাতে বাধ্য হয়।
উল্টো পথে অবাধে চলছে রিক্সা

রিক্সার বিচিত্র কাঠামো শহরের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ

  • ঢাকার ট্রাফিক অধিকাংশই নিয়ন্ত্রিত হয় রিক্সার দ্বারা।  মেকানিক্যালি এ ধরণের যানবাহন অনিরাপদ, দুর্ঘটনাপ্রবণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। যে শহরে মেট্রোরেলের মতো দ্রুতগতির গণপরিবহন চলে সেখানে রিক্সার মতো ধীরগতির উদ্ভট যান কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না।
  • বর্তমান যুগে এসে পৃথিবীর কোনো দেশে এমনকি আফ্রিকার দেশগুলোতেও রিক্সা শহরে চলাচল করতে পারে না
  • একটু ফাক পেলেই সামনের চাকা ঢুকিয়ে জায়গা নিশ্চিত করে রিক্সা, তারপর সুযোগমতো আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় পিছনে দ্রুতগতির যানবাহনকে তোয়াক্কা না করেই।
  • গাড়ি চালকেরাও এসব রিক্সা কে সমীহ করে চলে যেন গাড়িতে দাগ বা আঁচড় না পরে। রিক্সার বিচিত্র ও উদ্ভট অসমান গড়ণ কাঠামোর জন্য এদের ঘষা খাওয়ার কোনো চিন্তা থাকে না, তাই বেপরোয়া ভাবে মূল সড়ক থেকে অলি গলিতে নির্বিঘ্নে চলাচল করে।
  • রিক্সার কোনো সিগন্যাল লাইট নেই তাই তারা ডানে বামে কোন দিকে যাচ্ছে তা অন্য যানবাহন চালকেরা বুঝতে পারে না যা দুর্ঘটনার সম্ভাবনা তৈরী করে।

রিক্সার বিকল্প কি ?

  • রিক্সার মতো ধীরগতির অযান্ত্রিক যানবাহন অনেক আগেই প্রায় সব দেশ থেকেই উঠে গেছে, কেউ এটার বিকল্প খুঁজতে যায়নি কারণ এটা যুগের সাথেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ। স্বল্প দূরত্বে হেটে যাওয়া ছাড়াও অনেক দেশেই রেন্টাল বাইসাইকেল, রেন্টাল স্কুটার এর মতো প্রযুক্তিনির্ভর, পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী লাস্ট মাইল  ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।
  • স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতে আরো বেশি যাত্রী ধারণক্ষমতার ইলেকট্রিক বাগি কার বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে, বাংলাদেশেও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে এধরনরের পরিবেশবান্ধব দ্রুতগতির যান।
  • লেগুনার মতো নির্দিষ্ট রুটে এসব ইলেকট্রিক যান চলাচল করলে একইসাথে অনেক যাত্রী গন্তব্যে যেতে পারবে সাচ্ছন্দে।
বসুন্ধরায় চলাচল করছে বাগি কার

রিক্সা চালকদের পুনর্বাসন কি সম্ভব ?

  • ঢাকায় বেশিরভাগ রিক্সাচালকরাই পার্ট টাইম জব হিসেবে গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে মহাজন থেকে রিক্সা নিয়ে নেমে পরে, যারা সড়কে শহরের সড়কে চলতে আইন মানা তো দূরের কথা আইন মেনে যে চলতে হয় এটাই জানেনা।
  • এদের অনেককে কৃষিকাজ বা কারখানায় শ্রমিক হিসেবে পুনর্বাসনের মাধ্যমে সড়কে তাদের সংখ্যা কমানো যেতে পারে। তবে এটি করতে হলে সরকারকে সুনির্দিষ্ট পুনর্বাসন নীতি গ্রহণ করতে হবে।

রিক্সা ট্যাক্স প্রদানকারী নাগরিকদের সাথে বৈষম্যমূলক

  • একই  সড়কে  ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকেরা আকাশচুম্বী ট্যাক্স পরিশোধ করে পুরাতন বা রিকন্ডশনড গাড়ি কিনে রাস্তায় নামায় আবার প্রতিবছর রোড ট্যাক্স ইনকাম ট্যাক্স দিয়ে ফিটনেস সার্টিফিক এর পিছনে মোটা অংকের অর্থ ব্যায় করতে হয়।  অন্যদিকে রিক্সা চালকেরা কোনো নিবন্ধন বা ফিটনেস ছাড়াই রিক্সা নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়তে পারে, কোনো ট্যাক্স পরিশোধের ঝামেলাও নেই।
  • একদিকে ফিটনেস - রেজিস্ট্রেশন - লাইসেন্স বিহীন রিক্সা রাস্তায় কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে রাস্তায় যেমন খুশি চলাচল করছে অন্যদিকে সব নিয়ম মেনে সরকারকে যথাযথ ট্যাক্স দিয়েও গাড়িচালকেরা  দ্রুতগতির গাড়ি নিয়ে এই রিক্সার পিছনে ধীরগতিতে চলতে হচ্ছে যা সুস্পষ্ট বৈষম্যমূলক। এমনকি খানাখন্দে ভরা অসমতল ঢাকার রাস্তায় চলাচল করে গাড়ির মেইনটেনেন্স খরচের বোঝা বাড়ছে তবুও গাড়ি মালিকেরা বছরের পর বছর রোড ট্যাক্স ইনকাম ট্যাক্স দিয়েই চলেছেন।
  • রিক্সার যদি রাস্তায় চলতেই হয় তবে তাদেরকে কেন রেজিস্ট্রেশন করতে হবে না, ফিটনেস সার্টিফিকেট নিতে হবে না এমনকি রিকশাচালকদের কেন লাইসেন্স লাগবে না ?
রিক্সার দাপটে অসহায় ট্যাক্স প্রদানকারী যান্ত্রিক যানবাহন

প্রযুক্তির উন্নতির সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক, নিরাপদ, ও পরিবেশবান্ধব বাহন চালুর মাধ্যমে রিকশার মতো পুরনো ধীরগতির বাহনের জাদুঘরে জায়গা নেয়া উচিত। এর ফলে দুর্ঘটনা ও যাত্রী দুর্ভোগ কমবে, সাথে পরিবহন খাতে নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।

অযান্ত্রিক, ধীরগতির বিশৃঙ্খল এই রিক্সা পরিকল্পিত নগরায়নের প্রধান অন্তরায়।  রিক্সা নিয়ন্ত্রণে আইন করা এখন সময়ের দাবি। গরিব ও অসহায় বলে রিক্সাচালকেরা বার বার আইন অমান্য করেও পার পেয়ে গেলেও ২ কোটি মানুষের আবাস্থল ঢাকায় যানজটে যেখানে বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয় সেখানে রিকশাকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই।

আইন করে রিক্সা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এনে ধীরে ধীরে অপসারণ করে নগরের ট্রাফিক ব্যবস্থা কে গতিশীল করার এখনই উদ্যোগ না নিলে বাসযোগ্যতার ইন্ডেক্সে ঢাকা শহর আরো পিছিয়ে যেতেই থাকবে।

ঢাকা শরীরের পরিবহন ব্যবস্থার নৈরাজ্যে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে মিডিয়ায় আসা রিপোর্টের একটি ইউটউব প্লেলিস্ট

Contact Info

Level -5, Software Technology Park, Kawran Bazar, Dhaka - 1215

+880 1672-575-481
info@sigmind.ai

Daily: 10:00 am - 10:00 pm
Friday: Closed

fb_og_idlc

Spotlight On Startups

IDLC Finance Monthly Business Review

Sigmind is a pioneering AI-focused startup specialising in advanced computer vision technologies, founded in 2017 with a mission to revolutionise public safety, traffic management, and security through innovative solutions. Leveraging deep learning and artificial intelligence, Sigmind transforms visual data from surveillance cameras into actionable insights, enhancing the operational efficiency of enterprises and governments. With its flagship products like TrafficFlow and Watchcam, Sigmind offers a comprehensive suite for real-time traffic and human analytics, setting new standards in surveillance automation. Team MBR was in a conversation with the founder and CEO of Sigmind, Mr. Md. Abu Anas Ibn Samad, and had the opportunity to learn about his inspirations behind forming the startup and his future aspirations surrounding Sigmind.

Read the full interview here

Copyright 2024 Sigmind.ai ©  All Rights Reserved